এযাবতকালের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়ে কুড়ি বস্তা টাকা পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদের দান বক্সসে। শনিবার সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে ২০০ জনের বেশি মানুষের টাকা গুনতে সময় লেগেছে সারা দিন। এরপর সন্ধ্যায় জানা গেছে এবার সকল রেকর্ড ভেঙে ৪ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে পাগলা মসজিদের দান বাক্সসে। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত দেশের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদ, মসজিদে রয়েছে আটটি দানবাক্সে, যার টাকা পয়সা সহ সোনারূপো পর্যন্ত দান করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে দান বাক্স কয়েক মাস পর পর খোলা হয়,শনিবার সর্বশেষ ৩ মাস ৬ দিন পর দান বাক্স খোলা হয়েছিল সকালে, দান বাক্স খুলে পাওয়া যায় কুড়ি বস্তা টাকা, তাতেই ধারণা করা হয় এবার টাকার অঙ্কে রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এরপর সারাদিন ধরে টাকা গুনে নিয়োজিত ছিলেন ২০৬ জন মানুষ, ৩ বার গণনার পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে টাকার পরিমাণ জানানো হয় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল কালাম।
বাক্সসে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার সোনা রুপা পাওয়া গেছে এছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল সহ অনেক কিছু দান করে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ। শনিবার দান বাক্স খোলা হয়েছে ৩ মাস ৬ দিন পর এর আগে গত পহেলা অক্টোবর খোলা হয়েছিল দান বাক্স, তখন পাওয়া গিয়েছিল মোট ১৫ বস্তা টাকা, গুনার পর পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। সেবারের তুলনায় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা বেশি পাওয়া গেছে এবার।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং দান বাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান শনিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে মসজিদে দান বাক্স গুলো খোলা হয় তখন টাকা পাওয়া যায় মোট কুড়ি বস্তা এরপর শুরু হয় গণনার কাজ। দান বাক্স খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন এবং মসজিদ কমিটিতে দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ। এরপর প্রশাসনের উপস্থিতিতে সারাদিন ধরে চলে গণনার কাজ, এতে অংশগ্রহণ করেন মাদরাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জন সদস্য।
এসব টাকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন দানবাক্সের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালানোর পর বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে অনুদান দেয়া হয় জেলার বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় এ ছাড়া অসহায় এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করা হয়ে থাকে। তবে ভবিষ্যতে পাগলা মসজিদের টাকা থেকে সেখানে একটি মসজিদ মাদ্রাসা সহ ৬ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ইসলামী স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে ১০০ কোটি টাকার থেকেও বেশি।
কিশোরগঞ্জ সদরের অবস্থিত দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পাগলা মসজিদ। কথিত রয়েছে এ মসজিদে খাস নিয়তে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয় এ কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে এসে দান করে থাকে, শুধু টাকা-পয়সায় নয় স্বর্ণালঙ্কারসহ গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি দান করা হয় ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে। ভিন্নধর্মী সংবাদ পেতে চোখ রাখুন এখন পোস্ট।