উকুন - ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাত্র ১ দিনেই উকুন দূর করার উপায় । উকুন দূর করার উপায় । উকুন মারার ওষুধ । Dr Tasnim Jara

উকুন দূর করার তিনটা ঘরোয়া উপায় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। প্রথমে বলবো একটা ওষুধের নাম যা একবার ব্যবহারে উকুনগুলো চলে যায়। তবে অনেকেই ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক সমাধান বেশি পছন্দ করেন। তাদের জন্য থাকছে দ্বিতীয় উপায়, ওষুধ ছাড়াই চুল ভিজিয়ে উকুন নির্মূল করা। তারপর বলব ভেষজ পদ্ধতি রসুন, নারিকেল তেল, নিমের তেল, ভিনেগার ইত্যাদি নিয়ে। তিনটে পদ্ধতি যেটা আপনার সুবিধা সেটাই অবলম্বন করবেন। উকুন ধ্বংসের ঔষধ তার নাম বলি। আমি বলছি যে ওষুধ টা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে কিনে এনে ব্যবহার করতে পারবেন, ওষুধের নাম হচ্ছে আইভারমেকটিন (ইংরেজি: Ivermectin) লোশন জিরো পয়েন্ট পাঁচ পার্সেন্ট, বাজারে কিনতে পাবেন আর লিকনিল নামে দাম 130 থেকে 200 টাকার মত, যারা ভারত ও আমেরিকা থেকে দেখছে আপনারা এই নামে ওষুধ টা কিনতে পাবেন।

এখন ব্যবহারবিধি বলে দিচ্ছি, 6 মাস বা তার বেশি বয়সেও তারা এই ওষুধ টা ব্যবহার করতে পারবেন চুল শুকনো অবস্থায় মাথার তালুতে প্রথমে ওষুধ লাগবেন, তারপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ওষুধ টা লাগাবেন, এই ভাব টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো মাথার তালু আর সবগুলো চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত জাতীয় ওষুধ মাখানো হয় তারপরে 10 মিনিট এভাবে রেখে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। মাথায় শ্যাম্পু সাবান দিবেন না চুল শ্যাম্পু করতে চাইলে অন্তত 24 ঘন্টা পরে করবেন, এই ওষুধ টা একবার লাগালেই সাধারণত সব উকুন মারা যায় ২০১০ সালে ইউএসএ'র ১৩ টা শহরে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে একবার ব্যবহারিক ৯৫ শতাংশ মানুষের উপর একদম নির্মূল হয়ে গেছে।


এই ঔষধ কতটা নিরাপদ? পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি? সবাই কি ব্যবহার করতে পারবে? উকুন মারার জন্য এটা খুবই নিরাপদ ওষুধ, ইউএসএতে এটা অবৈধ একাউন্টান্সি ওষুধ, বছরের-পর-বছর করার পর যখন দেখা যায় একটা ওষুধ খুবই নিরাপদ এবং কার্যকর, তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট নাই, ডাক্তারি তত্ত্বাবধায়ন ছাড়াই মানুষ এই ওষুধ প্রয়োগ করতে পারে, সেই সব ওষুধগুলো কে উঠেছি অভার একাউন্টে ওষুধ হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। এখানে দুইটা ব্যাতিক্রম আছে- যারা গর্ভবতী বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে তারা ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। আর এই ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে খুশকি হওয়া, চামড়া জ্বালাপোড়া, চামড়া শুষ্ক হওয়া, চোখে গেলে চোখ যন্ত্রণা হওয়া, খেয়াল রাখবেন চোখে যেনো না যায় গেলে হালকা করে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন। 


যারা ওষুধ নিতে চাননা, কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া চান না তাদের জন্যই দ্বিতীয় ফর্মুলা- এই পদ্ধতিতে আমি প্রথমে চেষ্টা করার পরামর্শ দিব এই ফরমুলা উকুন দূর করতে মোট দুই সপ্তাহ সময় লাগে। এই দুই সপ্তাহ সময় চারবার চুল ভিজে উকুনের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হয়, দিনগুলো হলো- প্রথম, পঞ্চম ও 13 তম দিন।


অর্থাৎ প্রতিবার চুল আঁচড়ানোর মাঝে তিনদিনের গ্যাপ থাকবে। নিয়ম টা বুঝিয়ে বলি-উকুন দূর করার জন্য আমরা অনেকেই উকুন মারার চিরুনি ব্যবহার করি কিন্তু আচড়োনোর পরে আবার দেখা মাথায় উকুন ভরে গেছে,এমন কেন হয়? উকুন মারার চিরুনি দিয়ে আচড়োনোর পরে বড় উকুন পড়ে যায় কিন্তু সেই উকুনগুলো ডিম পেরে রেখেছে সেগুলো তো চুলেই থেকে যায়,  এই  ডিমগুলো ফুটে বের হতে সাত দিনের মতো সময় লাগে আবার সেই বাচ্চাগুলো প্রায় সাত দিনের মধ্যে বড় হয় নতুন করে ডিম পাড়া শুরু করে। এইভাবে মাথা আবার উকুনে ভরে যায়, এই চক্রটি নির্মূল করতে ১, ৫, ১৩ ফর্মুলা ব্যবহার করে মোট চারবার ভেজা চুলে মাথা আচড়োনোর পরে উকুনের ডিম দূর হবে। 


কি দিয়ে চুল গজাবে? চুলে ভালো করে তেল দিয়ে তার পরে আচরাতে পারেন, পানি দিয়ে ভেজাতে পারেন,ভেজা চুলে উকুন চলাফেরা করতে পারে যার ফলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর ফলে সহজেই উকুন নির্মূল করতে পারবেন। তাছাড়া প্রতিবার চিরুনি দিয়ে চুল টান দেয়ার পর চিরুনি থেকে উকুন সরিয়ে নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটা বেশি কার্যকরী, একটু কষ্ট হলেও এটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।


এবার আসি ভেষজ উপায়ে উকুন দূর করার নিয়ম।ইউটিউবে দেখানো আছে রসুন, সরিষার তেল, নারিকেল তেল ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে চুলে মাখলে উকুন নির্মূল হবে এমন শত ভাগ গ্যারান্টি দেয়া আছে। রসুনের গন্ধ সহ্য করতে পারে না দম আটকে যায়, নারিকেল তেল দিলে উকুন অক্সিজেন নিতে পারে না পারেনা এমন কিছু বলা আছে। গবেষণা কি বলে সেটা আমরা একটু দেখি, 2015/16 সালে ইরাকের প্রদেশের ৫ টি স্কুলে গবেষণা হয়েছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে দেখা হয় কোন উকুন দূর করে কিনা তার মধ্যে ছিল রসুন আর আপেল ভিনেগার। সেই গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুন 48 ঘণ্টার মাথায় দিয়ে রাখার পরেও উকুন মরে নাই আপেল ভিনেগার এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা, 2007 সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা গবেষণায় আসে তার চুলের উপর বিভিন্ন ধরনের তেল মাখিয়ে সেগুলোর উপর উকুন ছেড়ে দিয়ে রেখেছে উকুন কেমন ব্যবহার করে, সেখানে দেখা গেল চুলে নারিকেল তেল বা নিমের তেল থাকলে রক্ত শুষে নিচ্ছে তার খাবা ঠিকঠাক খেয়ে নিচ্ছে।


2015 সালে যুক্তরাজ্যের একটা মেডিকেল কমিটি অনেকগুলো গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখেছি টি ট্রি অয়েল ইউক্যালিপটাস উকুন দূর করে এমন ভালো কোন প্রমাণ নেই। 2021 সালে যুক্তরাজ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠান নাইস যেভাবে ইংল্যান্ডের সব হাসপাতালে চিকিৎসা গাইডলাইন আসে তারা অনেকগুলো গবেষণা পর্যালোচনা করে বলেছে হারবাল ভেষজ উপায়ে উকুন দূর করার নিরাপদ ও কার্যকর এমন ভালো প্রমাণ নাই তাই তারা পরামর্শ দিচ্ছেন আপনি চাইলে এগুলো দিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে চিকিৎসক হিসেবে আমি পরামর্শ দিতে পারব না কারণ এর পক্ষে প্রমাণ খুব দুর্বল। 


এবার আসি যেসব ভুলের কারণে আমরা উকুন তাড়াতে ব্যর্থ হই? বাসার সবার মাথা চেক করতে হবে উকুন আছে কিনা, যাদের উকুন আছে সবাইকে একই দিনে চিকিৎসা শুরু করবেন না হলে আবার একজন থেকে আরেকজনের মাথায় উকুন সরিয়ে যাবে। যার মাথায় উকুন তার চিরুনি চুলের ব্রাশ প্রতিদিন 5 থেকে 10 মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন,বিছানার চাদর বালিশের কাভার কাপড় তোয়ালে যেসব জায়গায় উপর লেগে থাকতে পারে সেগুলো গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, সেটা সম্ভব না হলে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখবেন দুই সপ্তাহ মতো। 


শেষকথা:- চুল ময়লা পরিষ্কার না থাকার কারণে মাথায় উকুন হয়, না আরেকজনের মাথা থেকে উকুন আছে বলে কেউ যদি আপনাকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করে সেটা তার জানাশোনার অভাবের কারণে। উকুনের সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন সম্পর্ক নাই।


সোর্সঃ ডা. তাসনিম জারা (চিকিৎসক, ইংল্যান্ড)

Post a Comment

Do not Share any Link

Previous Post Next Post

Contact Form