জুবায়ের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, তিনি প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় তার গাড়িটি বের করার আগে গাড়ির সকল কিছু ভালোভাবে চেক করে নেন। আজ সকালে ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিনের মত ভালোভাবে চেক করে নেওয়ার সময় হয়নি। তিনি দ্রুত ব্যাংকে চলে যান। ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হওয়ার পরে তিনি যখন বাসায় ফিরবেন তখন তিনি গাড়িটা চেক করতে থাকলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা জুবায়ের হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তার গাড়ির পেছনের নাম্বার প্লেট হারিয়ে গেছে। জোবায়ের মনে মনে ভাবছেন হয়তো গাড়ির নাম্বার প্লেটের স্ক্র লুজ হওয়ার কারণে রাস্তায় খুলে পড়ে গেছে।
গাড়ির নাম্বার প্লেট হারিয়ে হতভম্ব জুবায়ের তখন ভাবছে, এখন আমার কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে! গাড়ির নাম্বার প্লেট হারানো পরে জুবায়ের সবার প্রথমে বি.আর টি এ’র ওয়েবসাইটে ভিজিট করে জেনে নিলেন, তাকে এখন কী কী পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে।
✳️প্রথমে কোথায় যাবেন? বি আর টি এ’র দিক নির্দেশনা অনুসারে গাড়ির নাম্বার প্লেট হারিয়ে গেলে সর্বপ্রথম নিকটবর্তী থানায় যেতে হবে। থানায় যাওয়ার পরে নাম্বার প্লেট হারিয়ে গেছে এই মর্মে একটি জিডি করতে হবে।
✳️তারপর? নাম্বার প্লেট উত্তোলনের জন্য জিডি করা হয়ে গেলে জিডির একটি কপি নিয়ে উক্ত গাড়ির মালিককে (যার নামে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা আছে) যেতে হবে বি আর টি এ সংশ্লিষ্ট অফিসে। বি আর টি এ অফিসে যাওয়ার পরে গাড়ির নাম্বার প্লেট পুনরায় উত্তোলন করার জন্য আবেদন করতে হবে,’সহকারী পরিচালক, বি আর টি এ’- বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের বিষয় হিসেবে লিখতে হবে হারানো নাম্বার প্লেট পুনরায় উত্তোলন করার জন্য আবেদন।
আবেদন করা হয়ে গেলে, বি আর টি এ এর সহকারী পরিচালক একজন মোটরযান পরিদর্শককে গাড়ির ইঞ্জিন নাম্বার এবং চেসিস নাম্বার অনুসন্ধান করার জন্য নির্দেশ দিবেন। গাড়িটি পরীক্ষা করে মোটরযান পরিদর্শক গাড়ির মালিককে নাম্বার প্লেট উত্তোলনের জন্য পুনরায় সুপারিশ করবেন।
✳️কী কী লাগবে? বি আর টি এ তে গিয়ে সর্বপ্রথম আবেদন করার পর উক্ত আবেদনের সাথে গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি এবং নাম্বার প্লেট হারানোর পরে থানায় যেয়ে যে জিডির আবেদন করা হয়েছিল সেই জিডির অরিজিনাল কপি জমা দিতে হবে। এক কপি জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও সাথে রাখবেন,অনেক সময় আপনার কাছে চাইতে পারে।
তারপর পুনরায় নাম্বার প্লেট উত্তোলন করার জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে ব্যাংকে যেতে হবে…বি আর টি এ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে গাড়ির নাম্বারপ্লেট উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে এবং টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংক স্লিপটি সংরক্ষণ করে কাছে রাখতে হবে। পুনরায় নতুন নাম্বার প্লেট হাতে পাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই ব্যাংক স্লিপ হচ্ছে নাম্বারপ্লেট পুনরায় (নতুন) উত্তোলনের জন্য আবেদন করার প্রমান পত্র। অবশ্যই এই স্লিপটি সাবধানতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করবেন
✳️এখন ভাবছেন খরচ কত? সিএনজি অটোরিকশার এবং মোটরসাইকেল নাম্বারপ্লেট হারানো বা চুরি হওয়ার পরে পুনরায় উত্তোলন করতে খরচ হবে ২২৬০ টাকা। অপরদিকে অন্যান্য গাড়ির নাম্বার প্লেট হারানো বা চুরি হওয়ার পরে পুনরায় উত্তোলন করতে খরচ হবে ৪৬২৮ টাকা।
✳️কতদিন পর নতুন নাম্বার প্লেট হাতে পাবেন? বি আর টি এ’তে আবেদন এবং ব্যাংকে নির্দৃষ্ট টাকা জমা দেয়ার পর কিছুদিন সময় অপেক্ষা করতে হবে, আপনার মোবাইলে এস এম এসের জন্য। আবেদন করার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নতুন ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট তৈরি হয়ে গেলে, বি আর টি এ থেকে আপনার নিকৃষ্ট মোবাইল নাম্বারে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে, তখন বি আর টি এ’তে গিয়ে আপনার গাড়িতে নাম্বারপ্লেট লাগিয়ে নিতে আসতে হবে।
নাম্বার প্লেট পুনরায় উত্তোলনের সময় অবশ্যই ব্যাংক স্লিপ, জিডির কপি, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফটোকপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে রাখবেন (অন্যকে দিয়ে নিতে পাঠানোর জন্য অবশ্যই অথরাইজেশন লেটার সঙ্গে দিতে হবে এবং কোম্পানির গাড়ি হলেও কোম্পানীর প্রতিনিধির কাছে কোম্পানির এমডি বরাবর একটি অথরাইজেশন লেটার দিতে হবে অন্যথায় অন্যকে দিয়ে আপনি নাম্বার প্লেট সংগ্রহ করতে পারবেন না)।
আরো পড়ুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর
যেসব কাগজপত্র লাগবে, শুধুমাত্র সেসব কাগজপত্রই জমা দিতে হবে। গাড়িতে নাম্বার প্লেট না থাকলে এবং সেই গাড়ি রাস্তায় নিয়ে বের হলে রাস্তায় মোটরযান আইনের লঙ্ঘন হয়। যার ফলে আপনাকে শাস্তি পেতে হতে পারে এমনকি জরিমানাও গুনতে হতে পারে। তাই অবশ্যই গাড়িতে নাম্বারপ্লেট যুলিয়ে রাখা প্রতিটি মালিকের এবং গাড়ি চালকের দায়িত্ব।