বৈদ্যুতিক শকপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি ৷ First aid for electric shock


বৈদ্যুতিক শকপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে হয়ঃ 

শকপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পরিবাহী পদার্থ হতে কোনাে শুকনা বাঁশ বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে বৈদ্যুতিক সংযােগহীন করতে হবে। জ্ঞান থাকলে ডাক্তার ডাকতে হবে। আর জ্ঞান না থাকলে বা শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হলে কোনাে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তিনটি পদ্ধতির বিবরণ নিয়ে বর্ণনা করা হলাে- 

প্রথম পদ্ধতি ঃ 

তড়িতাঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিচের চিত্রের ন্যায় মুখমণ্ডল একদিকে ঘুরিয়ে উপুড় করে শােয়াতে হবে। মুখের ভেতরটা পরিষ্কার করে দিতে হবে। বাঁধানাে নকল দাঁত থাকলে তা খুলে ফেললে ভালাে হয়। এবার পরিচালককে তার হাঁটুর ওপরে ভর করে রােগীর মাথার দিকে তাকিয়ে তার ওপরে বসতে হবে। তারপর রােগীর কোমরের ওপরে মেরুদণ্ডের দুপাশে খুব কাছাকাছি তার হাত দুটিকে কনুই সােজা করে রাখতে হবে।

চিত্র- ১.১ 

এরপর পরিচালককে কনুই না বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হাত এবং উরুদেশ মােটামুটি খাড়াভাবে আসছে নিচের চিত্রে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত চাপ দিয়ে এক সেকেন্ডের জন্য পরিচালকের শরীরের ভার রােগীর ওপর প্রয়ােগ করতে হবে। এতে ফুসফুস থেকে বাতাস বহির্গত হবে।


চিত্র- ১.২ 

তারপর ধীরে ধীরে পরিচালককে প্রায় তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে তার হাত না তুলে পেছনে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে হবে। তখন রােগীর শরীরের ওপর কোনাে চাপ না থাকায় ফুসফুসে বাতাস ঢুকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস হচ্ছে ততক্ষণ প্রতি মিনিটে ১২ থেকে ১৫ বার করে সামনে এবং পেছনে ঝুঁকে এ প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

চিত্র-১.৩ 

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ 

তাড়িতাঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির বুকে বা পেটে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার জন্য বা অন্য কোনাে কারণে যদি উপুড় করে শােয়ানাে না যায় তবে উপরের চিত্রের ন্যায় রােগীকে সমতল স্থানে চিৎ করে শােয়াতে হয়। কোনাে কাপড় মােটা করে ভাজ করে অথবা বালিশ দিয়ে রােগীর কাঁধ উঁচু করতে হবে যাতে রােগীর মাথা বালিশের বাইরে কিছুটা ঝুলে থাকে। 

আরো পড়ুনঃ- বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার নিয়োম

এরপর পরিচালককে রােগীর মাথার দিকে হাঁটু গেড়ে বসে রােগীর হাত দু’টি বুকের ওপর যত কাছাকাছি সম্ভব ধরতে হবে এবং প্রায় দু’সেকেন্ড সময় নিয়ে কনুইতে মাটির দিকে চাপ দিয়ে রােগীর বাহুদ্বয়কে তার অভিমুখে বহির্মুখী করে তুলে অবশেষে তার হাটুর দুপাশে সােজা করে টেনে ধরতে হবে (নিচের চিত্রের ন্যায়)। 

এতে রােগীর ফুসফুস প্রসারিত হওয়ার ফলে বাতাস ভেতরে ঢুকে। তারপর ধীরে ধীরে একই পথে রােগীর বাহুদ্বয়কে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে বুকের ওপর চাপ দিয়ে ধরতে হবে। এতে ফুসফুস থেকে বাতাস বহির্গত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস না হচ্ছে ততক্ষণ প্রতি মিনিটে প্রায় ১২ বার এ প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

চিত্র-১.৪ 

তৃতীয় পদ্ধতিঃ 

উপরােল্লিখিত দু’টি পদ্ধতি ছাড়াও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করার আরাে একটি পদ্ধতি আছে। এ পদ্ধতিতে পরিচালকের বাম হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলকে রােগীর দাঁতের মধ্যে ঢুকিয়ে ধরতে হবে। পরে রােগীর মাথা পেছন দিকে বাঁকিয়ে চোয়াল উঁচু করে নাসারন্ধ্র দু’টি পরিচালকের ডান হাত দিয়ে চেপে ধরতে হবে। 

তারপর পরিচালককে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রােগীর মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে রােগীর বুকের ভেতর সবেগে হাওয়া পাম্প করে দিতে হবে। (নিচের | চিত্রের ন্যায়)। এতে বুকের প্রসারতা বৃদ্ধির ফলে উঁচু হয়ে যায়। মুখ ছেড়ে দিলে আস্তে আস্তে হাওয়া বেরিয়ে আসে। এ প্রক্রিয়া প্রতি ৪-৫ সেকেণ্ডে একবার করে করতে হয়। এ প্রক্রিয়া চালাতে গেলে পরিচালকের কোনাে দুরারােগ্য সংক্রামক ব্যাধি না থাকাই বাঞ্ছনীয়।


খুটির মাথায় থাকাকালীন তড়িৎ আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার বিধানঃ 

কোন ব্যক্তি ইলেট্রিক টাওয়ার বা ইলেকট্রিক পােলার উপরে থাকাকালীন শ প্রাপ্ত হয়। যদি থাকে কৃত্রিম উপায়ে পােল বা টাওয়ারের উপরে শ্বাসপ্রশ্বাস করানাে যায়, তাহলে তাকে নিচে নামানােই উচিত নয়। কেননা নিচে নামাতে গেলে তার অবস্থা খুবই শােচনীয় হতে পারে এ পদ্ধতিতে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রবাহিত করানােকে খুঁটির উপর চিকিৎসা বলে। 

আরো পড়ুনঃ- হাউজ ওয়্যারিং কী? বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের প্রকারভেদ ও বিস্তিরিত আলোচনা

আহত ব্যক্তি যখন নিজে নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, তখন ঐ আহত ব্যক্তিকে খুঁটির মাথা হতে নিচে নামাতে কোন অসুবিধা নেই। খুঁটির মাথা যেভাবে চিকিৎসা করা হয় তা পার্শ্বে চিত্রের মাধ্যমে দেখানাে হল। যদি কোন ব্যক্তি খুঁটির মাথায় শকপ্রাপ্ত হয় তাহলে সাথে সাথে আহত ব্যক্তির অবস্থার উপর ওয়াকিবহাল হতে হবে। সম্ভব হলে সাপ্লাই লাইনের সুইচ। বন্ধ করে দিতে হবে, যদি তার জন্য নিরাপদ মনে হয়।

2 Comments

Do not Share any Link

Previous Post Next Post

Contact Form